নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা: পাকিস্থানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হত না। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্থান রাষ্ট্রের সৃষ্টি পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তার। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানের একটি অংশ (পূর্ব পাকিস্থান) ভাগ হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। যদি জিন্নাহ তখন এই অঞ্চলকে (পূর্ব পাকিস্থান) পশ্চিম পাকিস্থানের সঙ্গে না নিতেন তবে আজ বাংলাদেশ সৃষ্টি হত না।
বুধবার(১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেনে মানিল মিয়ে হলে পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে এসব কথা বলেন বক্তরা। নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলে তিনি আসেননি। হাই কমিশনের কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। একাডেমির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আব্দুল জাব্বার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রবন্ধেমুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম থেকে শুরু কয়রে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের নানা ঘটনাবলি বর্ণ্না করা হয়। অনুষ্ঠানে জাফরুল হক জাফর জিন্নাহকে নিয়ে একটু উর্দু কবিতা পাঠ করেন। পাকিস্তানি শিক্ষার্থী মো. তাহির ও কামরান আব্বাস জিন্নাহকে নিয়ে উর্দুতে গাকন পরিবেশন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক পরিষদের আহবায়ক মো: সামসুদ্দিন, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, মো. শাখাওয়াত, সাইদুর রহমান, আবু হানিফ, নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশে অধ্যয়নরত দুইজন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পাকিস্থানের রাষ্ট্রদূতকে নওয়াব সলিমুল্লাহ পুরস্কার-২০২৪ মনোনীত করা হয়।
নাগরিক পরিষদের আহবায়ক মো: সামসুদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট আমাদের বিজয় দিবস, এটিই আমাদের স্বাধীনতা দিবস। তিনি জিন্নাহকে স্মরণ করে বলেন, ১৯৪৭ সালে যদি বাংলাদেশ পাকিস্থানের সঙ্গে না থাকত তবে আজ কাশ্মীরের মোট ঘাড় ফেরানোর উপায় ছিল না। ভারতীয় জান্তারা ঘাড়ের উপর অস্ত্র ধরে রাখত। জিন্নাহ পাকিস্থানের সঙ্গে নিয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।
আল্লামা ইকবাল হল বা জিন্নাহ এভিনিউর নাম কেন পরিবর্তন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারন দিল্লি এগুলো চায় তাই করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এগুলো চায়না। তাই বাংলাদেশকে চীন এবং পাকিস্তানের সাথে সুসম্পর্ক করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তা মো. শাখাওয়াত বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশ ১৭৫৭ সালের পর যে রাজনৈতিক অদক্ষতা বা হিংসা তার অবসান ঘটান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। একজন মানুষ হিসেবে জিন্নাহ ছিল অত্যান্ত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। একজনের মুসলিমের যে চরিত্র থাকার দরকার তা তার ছিল।
মো. শাখাওয়াত বলেন, জিন্নাহ যদি ১৯৪৭ সালে এই বাংলাদেশের দায়িত্ব না নিত তাহলে এই জাতিr অবস্থা পশ্চিম বাংলার মত হত। ভারতের একটা অঙ্গ রাজ্য হয়ে। তার দায়িত্ব নেওয়ার কারণে ওইদিন তিনি (জিন্নাহ) বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্থান পশ্চিম পাকিস্থানের সঙ্গে থাকবে। আমাদের এখন বন্ধুত্বের পরিমাপ করতে হবে।
বক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশকে এখন সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনভাবেই হোক এখন (৫ আগস্ট) স্বাধীন হয়েছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো না; আর পাকিস্তান না থাকলে বাংলাদেশের সৃষ্টি হতো না। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলাদেশের জাতির পিতা, কিন্তু সেটা স্বীকার করা হয় না। কিন্তু এই ভ্রাতৃত্ব রক্ষা করতে হবে।
তিনি আশা করেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর এখানে (বাংলাদেশ) প্রতিপালিত হবে।
অনুষ্ঠানে কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গাল বলেন, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মুসলিম লীগের নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। এটি ছিল সমগ্র ভারতের মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণ আন্দোলনের সূচনা। তাঁর স্বাস্থ্য ক্রমশ অবনতির দিকে গেলেও তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রীয় ব্যক্তি, যার নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।
কামরান ধাঙ্গাল বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হন। নতুন জাতির জন্য তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুস্পষ্ট। তিনি একটি প্রগতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের কথা বলেছিলেন এবং স্বাধীনতা ও সহনশীলতার প্রতি তাঁর অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। পাকিস্তানের শুরুর দিনগুলোতে জিন্নাহ নতুন রাষ্ট্রের স্থাপনায় নিরলসভাবে কাজ করেছিলেন। তিনি শুধু পাকিস্থানেই না সারাবিশ্বে সমাদৃত।
ফারজানা ইসলাম
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪জাতি হিসেবে আমরা নিলজ্জ…এদেরকে স্মরণ করতেছি আর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করতেছি।