নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা: অর্থনৈতিক অচলাবস্থাতে জানুয়ারীতে সুখবর নিয়ে এলো পোষাক রপ্তানি। এ মাসে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে অন্তত তিনটি রেকর্ড হয়েছে। সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের (৪.৯৭ বিলিয়ন) পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক রফতানির ইতিহাসে একক মাস হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ। রফতানিতে যে নেতিবাচক প্রবণতা ছিল, সেটা কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে দেশে ২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জানুয়ারির তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি পোশাক রফতানি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র ও পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘একটি খুশির খবর হলো—একক মাস হিসেবে পোশাক রফতানিতে এই প্রথম ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছে এই খাত।’ তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক দিকটি হলো—আমরা ধীরে ধীরে আমাদের পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে সক্ষম হচ্ছি এবং অত্যাধুনিক আইটেমগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যা আয় বৃদ্ধিতে প্রতিফলিত হচ্ছে।’
এর আগে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রফতানি হয়েছিল গত বছরের ডিসেম্বরে, যার পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) এই সাত মাসে তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ সাত মাসের হিসাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ইপিবি বলছে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে নিটওয়্যার পোশাক রফতানি হয়েছে ১৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। অবশ্য ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ওভেন পোশাক রফতানি কমে যাচ্ছে। এই সাত মাসে ওভেন পোশাক রফতানি হয়েছে ১২ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় কমছে ২ দশমিক ২০ শতাংশ।
এদিকে সার্বিকভাবে পোশাক রফতানির ক্রয়াদেশ বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই তিন মাসে ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে রফতানিকারকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রচলিত বাজারের ওপর অতি নির্ভরতাও কাটতে শুরু করেছে। রফতানিতে নতুন বাজারের হিস্যাও বাড়ছে। এতে তৈরি পোশাক শিল্পে লেগেছে নতুন এক রূপান্তরের ঢেউ। দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা রফতানিকারকদের।
এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। এ কারণে পোশাক রফতানির অর্ডার বাড়ছে। তারা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে আরও বেশি অর্ডার পাবেন।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মুদ্রাস্ফীতি কমেছে। এছাড়া নতুন বাজারের দিকে এগিয়ে চলছি। সার্বিকভাবে চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের প্রতিযোগীদের তুলনায় অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আগামী দিনে অর্ডার আরও বাড়তে পারে।’
এদিকে প্রবাসীরা জানুয়ারিতে দেশে গত সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় এই অর্থ ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স হিসেবে ১ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল। গত বছরের জুনে দেশে কোনও একক মাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।