সাজ্জাদ হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা: ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানি কমে গেলেও আশার আলো দেখাচ্ছে নতুন দেশগুলোতে তৈরি পোষাক রপ্তানি’র বাজার। এ বাজারে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৫৪ কোটি ডলার।
যেখানে আগের বছর প্রথমার্ধে এর পরিমাণ ছিল ৪০৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে জাপানে ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ২৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯ দশমিক ০৬ শতাংশ বেড়েছে রপ্তানি।
যদিও নতুন দেশগুলোর মধ্যে ভারতে রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “অপ্রচলিত বাজার এবং সেখানে আমাদের নতুন প্রোডাক্টে ফোকাস করায় আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। তবে খারাপের মধ্যেও অন্য দেশের তুলনায় আমরা ভালো করেছি।”
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “অস্ট্রেলিয়াসহ অপ্রচিলত বাজারগুলোতে আমরা ভালো করেছি। ওভারল যেটা আমাদের হয়েছে, আমি বলব যে খারাপের মধ্যে ভালো। এই কারণে যে, ডিমান্ডই কম ছিল, ইমপোর্টই কম হয়েছে; সেই হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করেছে।”
তবে সার্বিকভাবে বছরের প্রথমার্ধে পোশাক রপ্তানিতে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে বাংলাদেশ। গত ছয় মাসে প্রায় ৪৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যেখানে আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৪০৪ কোটি টাকা।
সামনের দিনে আরও প্রবৃদ্ধির আশা দেখছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক।
তিনি বলেন, “নির্বাচনের একটা প্রভাব ছিল, সেটা শেষ হয়েছে। তাছাড়া নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইইউতে খুচরা বিক্রি বেড়েছে। ফলে ক্রেতাদের হাতে থেকে যাওয়া স্টক কমেছে।”
পোশাক শিল্পের স্বার্থে গ্যাস সংকট নিরসনের পাশাপাশি কাস্টমস ও বন্ড সেবা সহজীকীকরণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ইউরোপ- আমেরিকায় যে কারণে কমছে রপ্তানি
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে কমেছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কমে গেছে পোষাক রপ্তানি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যের বরাত দিয়ে সংগঠনটি বলছে, গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমা এ বাজারে ১১৩৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১১৫০ কোটি ডলার।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয় বরং গার্মেন্টসের অন্য বহৎ দুই পোষাক রপ্তানিকারক দেশ চীন-ভিয়েতনামেরও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাক থেকে। আর এসব তৈরি পোশাকের ৪০ শতাংশ যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ দেশে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিভিন্ন কারণে ইইউর ক্রেতাদের আসলে বায়িং পাওয়ার কমেছে। ২০২২ সালে তাদের ইমপোর্ট অনেক ভালো করেছিল, সেসময়ের কিছু ইনভেন্টরি থেকে গিয়েছিল, স্টক থেকে গিয়েছিল’।
ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথমার্ধে স্পেনে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ফ্রান্সে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ১১ শতাংশ এবং পোল্যান্ডে ১৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অন্যদিকে জার্মানিতে ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ, ইতালিতে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমেছে।
মূলত, ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে তৈরি পোষাকের প্রধান দুই ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশের ক্রেতাদের কমে গেছে কাপড় কেনার চাহিদা।
যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের মতো তৈরি পোষাক রপ্তানিকারণ দেশগুলোতে।