বার্তা কক্ষ
পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ২৬৬ আসনের একটির ফল ঘোষণা স্থগিত আর অন্যটির ভোট হয়নি। ফলাফল ঘেষিত ২৬৪ আসনে মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১০১ আসনে জয় পেয়েছেন। এরমধ্যে ৯৩ জন ইমরানের দল পিটিআইয়ের সমর্থিত প্রার্থী।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা নওয়াজের দল পেয়েছে ৭৫ আসন। ৫৪ আসন নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এ ছাড়া মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (এমকিউএম) ১৭ আসনে জয় পেয়েছে। বাকি ১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে অন্যান্য দল।
এরপরই নওয়াজ শরিফ সরকার গঠনের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়েছে যাচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে পিপিপি ও এমকিউএমের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
কেন্দ্রে একটি টেকসই জোট সরকার গঠনে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে প্রাথমিক একটি কৌশল (ফর্মুলা) বানিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন। এই কৌশল ধরেই আগামী দিনের সম্ভাব্য মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চায় দলটি।
পিএমএল-এনের নেতা নওয়াজ শরিফ, শাহবাজ শরিফ, পিপিপির নেতা আসিফ আলী জারদারি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি, এমকিউএম-পির নেতা খালিদ মকবুল সিদ্দিকি, জামায়াতে উলেমা-ই ইসলামের (জেইউআই) নেতা মওলানা ফজলুর রহমান, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদে আজমের (পিএমএল-কিউ) নেতা সুজাত হুসাইন এবং অন্য প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগির মূল আলোচনা হতে পারে।
পিএমএল-এন ও পিপিপির শীর্ষ বৈঠকে মতৈক্য
পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন পিএমএল-এন ও পিপিপির নেতারা। ওই বৈঠকে ‘দেশকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষায়’ দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্য হয়েছে বলে পিএমএল-এনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ আজ রোববার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে লাহোরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসভবনে যান। সেখানে দুই পক্ষ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
দুই দলের শীর্ষ নেতারা রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে একমত হন উল্লেখ করে পিএমএল-এনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে রাজনৈতিক সহযোগিতার জন্য নেতারা একমত হয়েছেন।’
সূত্র বলছে, এসব আলোচনায় পরবর্তী জোট সরকারের প্রধান হিসেবে পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে নওয়াজ শরিফের নাম সামনে আনা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্ভাব্য শরিকদের মত জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে জোটভুক্ত হতে ইচ্ছুক কয়েকটি দল পিএমএল-এন থেকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজ শরিফের পক্ষে।
পিপিপি’র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী বিলাওয়াল ভুট্টো
যদিও নওয়াজ কিংবা শাহবাজ নন, বরং পরবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারিকে দেখতে আগ্রহী পিপিপি। দলটি এ বিষয়ে ছাড় দিতে নারাজ। পিপিপির শীর্ষ নেতৃত্ব চায়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে পিএমএল-এন আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিলাওয়ালকেই সমর্থন করুক।
ইমরান–সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থী যোগ দিলেন নওয়াজের দলে
ইমরান–সমর্থিত বিজয়ী প্রার্থী যোগ দিলেন নওয়াজের দলে
পিএমএল-এনের সূত্রটি জানিয়েছে, ক্ষমতা ভাগাভাগির কৌশল নির্ধারণে সব দলের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিটি করার চেষ্টা করছেন নওয়াজ-শাহবাজ। জোট সরকারের কাঠামো কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ করবে এই কমিটি।
অন্যদিকে পিপিপি-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো ও কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারি জোট সরকারে থাকার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে পিএমএল-এনের পক্ষ থেকে পাওয়া প্রস্তাব নিয়ে পিপিপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির (সিইসি) বৈঠকে আলোচনা করা হবে। আজ সোমবার এ বৈঠক হওয়ার কথা।
এ ছাড়া এবারের নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে জিতে আসা রাজনীতিকদেরও দলে টানার চেষ্টা করছে পিএমএল-এন।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অন্তত ছয়জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজের দলে ভিড়েছেন। আরও কয়েকজন আসতে পারেন। এখন স্বতন্ত্রদের দলে টানার একই উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে পিপিপিও।
ছোট দলগুলোকে জোট সরকারে আনার তাগিদ
পিএমএল-এন সূত্রে জানা গেছে, যদি পিপিপিসহ মিত্ররা প্রধানমন্ত্রীর পদ পিএমএল-এনের জন্য ছেড়ে দিতে রাজি হয়, তাহলে দেশের প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্টের স্পিকারের পদ পিপিপিকে দেওয়া হতে পারে, এমনটাই জানিয়েছে ওই সূত্র।
একইভাবে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেওয়া হতে পারে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তানকে (এমকিউএম-পি)। কিংবা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে জিতে আসা কোনো প্রভাবশালী প্রার্থী জোট সরকারে এলে, তাঁকেও ডেপুটি স্পিকার করা হতে পারে।
এর পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পিএমএল-এন নিজেদের হাতে রাখতে পারে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে মিত্রদের মধ্যে বণ্টন করার সুযোগ রাখতে চায় পিএমএল-এন। এমনটাই বলা হয়েছে দলটির ঠিক করা প্রাথমিক কৌশলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, সিনেটের চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদে কে বসবেন, সেটা সিনেট নির্বাচনের পরে সম্ভাব্য জোট সঙ্গীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঠিক করতে চায় নওয়াজের দল।
সম্ভাব্য রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে প্রাথমিক এই কৌশল তুলে ধরবে পিএমএল-এন। তবে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দলটি কৌশলে পরিবর্তন আনতে পারে বলেও ওই সূত্র জানিয়েছে।