রূপসী বাংলা ২৪

আন্তর্জাতিক বিশেষ

বিদ্রোহীদের সামনে যে কারণে দাঁড়াতে পারছে না মিয়ানমার সেনাবাহিনী

বার্তাকক্ষ

বিদ্রোহীদের সামনে ‘অসহায়’ বিলিয়ন ডলারের সেনাবাহিনী
মিয়ানমার সেনাবাহিনী। 

সেনাশাসন তিন বছর পার করলেও এখন তা ক্রমশ পতনের রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছে। সেনাবাহিনীর পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করা হলেও, সেই বাহিনী এ লড়াইয়ে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। ঐক্যবদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সামনে অসহায় হয়ে পড়ছে সেনারা। বিষয়টি জান্তা সরকারের প্রধানও স্বীকার করেছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের পর ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ-আন্দোলন ঠেকাতে জান্তা বাহিনী নজিরবিহীন দমনপীড়ন শুরু করলে, হাতে অস্ত্র তুলে নেয় গণতন্ত্রপন্থীরা। এর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আগে থেকে লড়াই চালিয়ে আসা বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী।

মূলত অভ্যুত্থানের কয়েক মাস পর এ লড়াই শুরু হলেও, গত বছরের শেষদিকে এসে প্রচণ্ড গতি পায়। এরপর গত কয়েক মাস ধরে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে একের পর এক জয়ের খবর আসছে। বিভিন্ন ফ্রন্টে পরাজয়ের কথা স্বীকার করছেন জান্তা কর্মকর্তারাও।

সম্প্রতি উত্তরাঞ্চল তথা চীন ও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বড় প্রতিরোধের মুখে পড়েছে জান্তা সেনারা। এই লড়াইয়ে মানববিহীন ড্রোনের মতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বিদ্রোহীরা।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খোদ সরকারপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তিনি রীতিমতো অভিযোগের সুরে বলেছেন, শান রাজ্যে তার সেনাদের ওপর প্রচণ্ড শক্তি ও উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যোদ্ধারা।

গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের একটি সভায় কথা বলছিলেন জান্তা প্রধান। সভায় উপস্থিত সহকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদ্রোহী সেনারা শক্তি ও অস্ত্রশস্ত্রে তার বাহিনীকেও ছাড়িয়ে গেছে।

চলমান এই লড়াইয়ে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বিপরীতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর পদাতিক যোদ্ধা ছাড়া আর কিছুই নেই। তবে সম্প্রতি তারা অত্যাধুনিক ড্রোন প্রযুক্তি ছাড়া আরও কিছু উন্নত অস্ত্রশস্ত্র হাতে পেয়েছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে আসছে।

১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতা অর্জনের পর গত ৭৬ বছরের বেশিরভাগ সময় দেশ শাসন করেছে সেনাবাহিনী। এই বিশাল সময় ধরে সেনাবাহিনীকে গঠন ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগ দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যয় ও বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সামরিক খাতেই।

এমনকি ২০১৫ সালে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করার পর নোবেলজয়ী অং সান সু চি ‘র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকারের পাঁচ বছরের শাসনকালেও জাতীয় বাজেটের সিংহভাগই গেছে সামরিক খাতে।

দ্য ইরাবতির প্রতিবেদন মতে, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুচির সরকার উৎখাত করার পর গত তিন বছর ধরে সেনাবাহিনীর পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে জান্তা কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: মিয়ানমার পরিস্থিতি / গাছে তুলে মই কেড়ে নিচ্ছে জান্তার ‘বন্ধুরা’!

গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টার এক রিপোর্ট মতে, ২০২১ সাল থেকে ওই সময় পর্যন্ত অন্তত ১ বিলিয়ন তথা ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও গোলাবারুদ আমদানি করেছে সেনাবাহিনী।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের মিয়ানমার সংক্রান্ত বিশেষ উপদেষ্টা পরিষদের তৈরি এ রিপোর্টমতে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিজেরাই বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র তৈরি করছে। এজন্য তারা অন্তত ১৩টি দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সরবরাহ পাচ্ছে। ১৩টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও ফ্রান্সও রয়েছে।

মিয়ানমারের জান্তা যেসব অস্ত্র তৈরি করছে তার মধ্যে আছে স্নাইপার রাইফেল, বিমান-বিধ্বংসী কামান, গ্রেনেড, বোমা, ল্যান্ডমাইন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ-ব্যবস্থা। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর কয়েকটি দেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও এসব অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়নি।

এরমধ্যে একটির চুক্তির অধীনে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রথম চালানে দুটি সুখোই যুদ্ধবিমান পায় মিয়ানমার। অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার কাছ থেকে ৬টি সুখোই এসইউ-৩০ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ওই চুক্তি করেন হ্লাইং।

এভাবে দেশি-বিদেশি অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধবিমান থাকা সত্ত্বেও এবং বছর বছর সামরিক বাজেট বাড়ানোর পরও জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে তাতমাদো। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের হাতে ‘অসহায়ের’ মতো মার খাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি তিন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের ‘অপারেশ ১০২৭’ শুরু হওয়ার পর মাত্র চার মাসে কয়েক ডজন শহর, শত শত সেনা চৌকি হারিয়েছে তারা।

গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জাতিগত তিনটি সশস্ত্র সংগঠন (এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশন বা ইএও) দেশটির উত্তরাঞ্চলে বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করে এবং সফলতা পায়।

এ সাফল্যের পরপরই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসসহ (পিডিএফএস) অন্যান্য জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন ও মিলিশিয়া গোষ্ঠী মিয়ানমারের পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চলে জোরদার লড়াই শুরু করে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে বেশ বেকায়দায় পড়েছে জান্তা সরকার।

বিরোধীদের ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) বলেছে, দেশের ৬০ শতাংশ অঞ্চল এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাত পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। ফলে দেশের কোন অঞ্চল কারা নিয়ন্ত্রণ করছে তা পরিমাপ করা কঠিন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন

আন্তর্জাতিক দক্ষিণ এশিয়া প্রধান খবর

রাখাইনের শহর দখলে বিদ্রোহীরা, ভারতে পালিয়েছে সরকারি ৩শ’ সেনা

  • জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
বার্তাকক্ষ মায়ানমার: মায়ানমার রাখাইন শহর দখলে নিয়েছে সরকারি বিরোধী বিদ্রোহীরা। এরপর প্রাণ বাঁচাতে সামরিক শাসকদের পৌনে ৩শ’ সেনা ভারতের মিজোরামে
অর্থ-বাণিজ্য প্রধান খবর বিশেষ

নতুন দেশে বাড়ছে পোষাক রপ্তানি

  • জানুয়ারি ১৯, ২০২৪
সাজ্জাদ হোসেন নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা: ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানি কমে গেলেও আশার আলো দেখাচ্ছে নতুন দেশগুলোতে তৈরি পোষাক রপ্তানি’র বাজার। এ